শূন্য হওয়া বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা): উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের দৌড়ঝাঁপ, বিএনপি-জামায়াত প্রস্তুত

4
Spread the love

বাগেরহাট প্রতিনিধি

শূন্য হওয়া বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) আসনের উপ নির্বাচনের তফসীল ঘোষণা হওয়ায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্তত চার নেতা কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তারই অংশ হিসেবে গত শনিবার থেকে স্থানীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা শুরু করেছেন। তবে কে হচ্ছেন এই আসনের দলীয় প্রার্থী তা দেখতে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার মনোনয়নবোর্ডের সভা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে। গত ১০ জানুয়ারি বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মোজাম্মেল হোসেনের মৃত্যু হলে আসনটি শূন্য হয়। গত ৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন শূন্য আসনে উপ নির্বাচনের তফসীল ঘোষণা করে। আগামী ২১ মার্চ এই শূন্য আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

আগামী ২১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বাগেরহাট-৪ আসনের উপ নির্বাচন নিয়ে স্থানীয় দলের তৃণমূলের নেতাকর্মী ও ভোটারদের মধ্যে তেমন আগ্রহ নেই। নির্বাচনে কতভাগ ভোটার ভোট কেন্দ্রে যাবেন তা দেখতে ভোটের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হচ্ছে। অন্যদিকে, এই আসনের উপ নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত ইসলাম জোটবন্ধ না থেকে আলাদা আলাদা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে আভাস মিলেছে। এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে আগ্রহীদের দৌড়ে রয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, সদ্য প্রয়াত বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেনের পুত্রবধূ ইসমত শিরীন চৌধুরী সঞ্চিতা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন, কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা মিজানুর রহমান জনি, জামিল হোসাইন, সাবেক ছাত্রনেতা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নকিব নজিবুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুর রহিম খান এবং সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট প্রবীর হালদার। এরমধ্যে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ ছাড়া সবাই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

সাবেক ছাত্রনেতা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নকিব নজিবুল হক এই প্রতিবেদককে বলেন, স্কুলে পড়ার সময় থেকে আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হ্নদয়ে লালন করি। আমি তৃণমূল থেকে উঠে এসেছি। আমি ৮০ দশকে ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে আমার রাজনীতিতে হতেখড়ি। আমি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। পরে জেলা যুবলীগের সাধারণ ছিলাম। আমি ৯০ এর স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে সব ধরনের আন্দোলনে রাজপথে ছিলাম। বিগত দিনে দলের জন্য আমি কি করেছি তা স্থানীয় নেতারা সবাই জানেন। আমি নিজেকে যোগ্য মনে করে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। দল আমাকে যোগ্য মনে করলে মনোনয়ন দেবে। দলীয় সভাপতি যাকে এই আসনে মনোনয়ন দেবেন আমি তার হয়ে কাজ করব।

বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুজ্জামান টুকু বলেন, এই প্রতিবেদককে বলেন, সদ্য প্রয়াত জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চার আসনের সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেনের শূন্য আসনে দলের মনোনয়ন পেতে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করে কেন্দ্রে যেয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এই আসনে দল কাকে মনোনয়ন দেবে তা দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বোর্ড সভায় ঠিক করবেন। দল যাকে মনোনয়ন দেবে আমরা তার জন্য কাজ করব। বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ টি এম আকরাম হোসেন তালিম এই প্রতিবেদককে বলেন, বাগেরহাট-৪ আসনের উপ নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্রকে অবহিত করা হয়েছে। এই আসনে ঐক্যজোটের প্রার্থী দিবে না একক দিবে তা এখনো কেন্দ্র থেকে জানানো হয়নি। তবে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।

বাগেরহাট জেলা জামায়াত ইসলামীর আমির মওলানা রেজাউল করিম এই প্রতিবেদককে বলেন, বাগেরহাট-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সাথে সব সময় আমাদের চির প্রতিদ্বন্দ্বীতা হয়ে থাকে। বিএনপির সাথে ঐক্য হওয়ার পর থেকে দল আমাদের প্রার্থীকে এখানে মনোনয়ন দিয়ে আসছে। এই আসনে আগামী ২১ মার্চের নির্বাচন নিয়ে আমরা কেন্দ্রকে অবহিত করেছি। বিএনপি’র সাথে ঐক্য থাকলে আমরা আর তানাহলে দল চাইলে আমরা আলাদা প্রস্তুত আছি নির্বাচন করতে। এই সরকারের আমলে আসলে নির্বাচনের কোন পরিবেশ নেই। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচন তার প্রমাণ। আমরা যেহেতু জনগনের জন্য রাজনীতি করি তাই নির্বাচন আসলে আমরা নির্বাচনে মাঠে থাকতে চাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভোটাররা এই প্রতিবেদককে বলেন, দলের প্রার্থীদের জনগনের কাছে জনপ্রিয়তা কতটুকু তা আর এখন বিবেচ্য নয়। বিবেচ্য হচ্ছে দল কাকে মনোনয়ন দিচ্ছে। তাদের কাছে ভোটারদের কদর দিনদিন কমে যাচ্ছে। ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রে গেলে প্রার্থীর সমর্থকরা মূখ চিনে ঠিক করে আমি ভোট কেন্দ্রের বুথে ঢুকব কি ঢুকব না। আর এতো উপ নির্বাচন এই নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীরাও ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে আসবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ এই ভোটারদের। দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলেন, আগে ভোট আসলে নেতারা ভোটের মাঠে কাজ করতে নিবেদিত কর্মীদের খুঁজত। এখন আর আমাদের প্রয়োজন হয়না। তাই আমরাও আর সেভাবে যাই না। দলের নেতারা তাদের আস্থাভাজনদের নিয়ে ভোটের মাঠে ছুটে বেড়ান। বর্তমানে যে রাজনীতি চলছে তাতে আগামীতে নির্বাচন, আন্দোলন সংগ্রামে কারা মাঠে থাকবে তা নিয়ে ওই কর্মীরা শংকিত।