মঙ্গলবার সকালের শুরুতেই মর্মান্তিক ও দুঃখজনক এক ঘটনার সাক্ষী হলো কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন। বঙ্গোপসাগরের বুকে ট্রলারডুবিতে নিহত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। নৌ-বাহিনী এবং কোস্টগার্ডের তৎপরতায় জীবিত উদ্ধার হয়েছে ৭১ জন। তবে এখনও নিখোঁজ ট্রলারের অর্ধশতাধিক আরোহী। মূলত এসব অভিযাত্রীর গন্তব্য ছিল মালায়েশিয়া। যাদের প্রায় সবাই নির্মম নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা। এ এক অবাক ঘটনা-যে জীবন বাঁচাতে দুই বছর আগে তারা পারি জমিয়েছিলেন ভিনদেশে, সেই জীবনকেই এখন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে ফেলে দিচ্ছে আরও অনিশ্চয়তার মধ্যে। আসল বাস্তবতা হলো, শরাণার্থী শিবির এখন রোহিঙ্গাদের কাছে এক কারাগার। শিবিরের এই বন্দি জীবন থেকে মুক্তি পেতে অবৈধ-ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও অসংখ্য রোহিঙ্গা বেছে নিচ্ছে সে পথকেই। আমরা এরই মধ্যে জেনেছি, দুর্ঘটনাবশত পাথরে ধাক্কা লাগায় এই ঘটনা ঘটে। আর এ কারণেই ঘটনার কথা জানাজানি হয়ে যায়। না হলে কেউ কোনোদিন জানতেই পারতো না এমন কিছু হয়েছিল। কিন্তু এভাবেই প্রায় প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা ভিনদেশে যাচ্ছে। এটা আর গোপন কোনো বিষয় নয়। অন্তত কক্সবাজারের প্রশাসনের কাছে তা ‘ওপেন সিক্রেট’। এক শ্রেণির দালাল আর ট্রলার মালিক মিথ্যা প্রলোভনে রোহিঙ্গা পাচারের সাথে সরাসরি জড়িত। আজকের ঘটনায় জীবিত উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা অকপটে স্বীকারও করেছে, ‘উন্নত’ জীবনের আশা পেয়ে প্রাণের ঝুঁকি আছে জেনেও তারা এই পথে পা বাড়িয়েছে। নারীদের কেউ কেউ বলেছেন, বিয়ে ঠিক হয়েছে মালায়েশিয়ায়, তাই সেদেশে যাচ্ছিলেন তারা। তাদের কেউ আবার বলেছেন, শরণার্থী শিবিরের ‘কষ্ট’র কথা। যদিও বাংলাদেশ সরকার দাবি করেছে, ট্রলারের আরোহীরা শিবিরের না, বাইরের। যারা ১৯৯২ সালে এসেছিল। প্রশ্ন হলো আগের হোক বা এখনকার হোক রোহিঙ্গারা অন্যদেশে যাওয়ার সুযোগ পায় কিভাবে? সব জেনেও প্রশাসন কেন তাদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ এই পথ বেছে নেওয়ার সুযোগ দেয়? এতে তো বাংলাদেশের নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হয়। কেননা রোহিঙ্গাদের অবৈধ পথে মালায়েশিয়ায় পৌঁছে দিয়ে সেইসব ট্রলার খালি ফিরে আসে না। গোয়েন্দা তথ্য বলছে, মাদক-অস্ত্রও আসে তাতে করে। এরই মধ্যে মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা এদেশের যুব সমাজের বড় একটা অংশকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছে। আমরা মনে করি বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চিন্তার জায়গা এখানেই। কেননা, রোহিঙ্গাদের নানান বৈরি আাচরণে এরই মধ্যে এ দেশের সঙ্কট বাড়িয়েছে। নতুন করে যেন আর কোনো সমস্যার জন্ম না হয়। রোহিঙ্গা পাচারের অবৈধ এই রুট বন্ধ করা জরুরি। তাতে অনেক নিরীহ মানুষের প্রাণও যেমন বাঁচবে, তেমনি সুরক্ষিত থাকবে দেশের নিরাপত্তাও।