খুলনা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে তিন গুণ রোগী

3
Spread the love

  • স্টাফ রিপোর্টার

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালধারণক্ষমতার তিন থেকে চার গুণ বেশি রোগী নিয়ে চলছে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ। এখানে রয়েছে চিকিৎসক ও ওষুধ সংকট। ফলে সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীসহ সংশ্লিষ্টরা।

খুমেক বার্ন ইউনিটে ৩৬টি বেড রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসা নিচ্ছে ৯০ জন। দুই সপ্তাহ আগে এখানে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১০৫ জন। ২০ বেডের জন্য দুই জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ ছিল। কিন্তু এখন কার্যক্রম চলছে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়েই। ফলে পর্যাপ্ত সেবাদান দুরূহ হয়ে পড়ছে। এখানে সহকারী রেজিস্ট্রার পদমর্যাদার একজন চিকিৎসক ছিলেন। কিন্তু তিনি সম্প্রতি এ হাসপাতালেরই সার্জারি ইউনিট ২ এ বদলি হয়েছেন। ফলে বার্ন ইউনিট রেজিস্ট্রারশূন্য রয়েছে। রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, বিকাল ২টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত এখানে কোনও চিকিৎসকই থাকেন না। ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও এখানে দায়িত্বে থাকেন না। অপর্যাপ্ত জনবলের পাশাপাশি যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতাও রয়েছে। খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ষষ্ঠ তলায় ২০১৪ সালে ২০টি বেড নিয়ে চালু হয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট। সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. তরিকুল ইসলামের প্রচেষ্টায় তা ৩৬ বেডে উন্নীত হয়। বেডের বাইরে বারান্দায়, লিফটের সামনে মানুষের হাঁটার রাস্তায়ও রোগীতে পূর্ণ থাকে। এ অবস্থায় নিয়মিত রাউন্ড দেওয়ার কাজেও একজন চিকিৎসককে বেগ পেতে হয়।

ওয়ার্ডে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ রয়েছে দুটি, আর চিকিৎসকের পদ চারটি। তবে এখন দায়িত্বে রয়েছেন একজন। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা অন্যান্য বিভাগে দায়িত্ব পালন করলেও বার্ন ইউনিটে কোনও ইন্টার্ন চিকিৎসক থাকেন না। ফলে এখানে ভর্তি হওয়া রোগীদের দুপুরের পর জরুরি সমস্যায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সহকারী অধ্যাপক সপ্তাহে সোমবার আউটডোরের রোগী দেখেন এবং রবি ও বুধবার অপারেশন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এসময় নতুন রোগী দেখলেও পুরনো সব রোগীর জন্য সব সময় রাউন্ড দিতে পারেন না।

বাগেরহাট থেকে আসা রোগী সোহাগ বলেন, ১৫ দিন আগে নসিমনে উঠলে তেলের ট্যাংক ফেটে আগুন ধরে যায়। আগুনে তার শরীরের নিচের অংশ ঝলসে যায়। তিনি ওই নসিমনটির চালক। এখানে চিকিৎসার জন্য আসেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। ওষুধ সরবরাহ না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। ড্রেসিংও ঠিকমতো করা যাচ্ছে না। যশোরের খাজুরা থেকে শিশু ফারিয়াকে (৯) নিয়ে এ হাসপাতালে আসা রেখা বলেন, ‘গত ২৮ জানুয়ারি বিকাল ৩টার দিকে শীতের মধ্যে আগুন পোহাচ্ছিল ফারিয়া। হঠাৎ করেই আগুনে তার বাম পাশের কাপড় জ্বলে ওঠে। আর এ থেকেই ফারিয়ার বাম পাশ পুড়ে যায়। তাকে নিয়ে এখানে আসেন চিকিৎসার জন্য। কিন্তু জরুরি প্রয়োজনে বিশেষ করে বিকাল ও রাতে কোনও ডাক্তার পাওয়া যায় না। নার্সরাই সেবা প্রদান করেন। এক সপ্তাহ হতে যাচ্ছে, কিন্তু ফারিয়ার উন্নতি বোঝা যাচ্ছে না।’

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট প্রধান ডা. মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘২০টি বেড নিয়ে এ ইউনিটের কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। সেই থেকে এখনও একজন চিকিৎসকই রয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে এখানে গড়ে ৮০ জনের বেশি রোগী থাকেন। মাঝে মাঝে শতাধিক রোগীও হয় এখানে। বেড দিতে না পারায় ফোরে শুইয়ে সেবা দিতে হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক এখানে পদায়ন করা দরকার। আর এখানে বেড অন্তত ৫০টিতে বাড়ানো প্রয়োজন।’ এই বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স নওরিন সুলতানা বলেন, ‘এখানে রোগীর প্রচ- চাপ থাকছে। আমরা ২০ ভাগের বেশি পোড়া রোগী পেলে তাকে ঢাকায় রেফার করি। অনেকেই আছেন অস্বচ্ছলতার কারণে যেতে পারেন না। তাদের এখানে সাধ্যমতো সেবা দেওয়া হয়। কিন্তু এখানে দিনের ১৮ ঘণ্টাই ডাক্তারশূন্য অবস্থায় থাকতে হয়। একজন চিকিৎসক দিয়ে কাজ চলছে। ডাক্তারের সংকট তীব্র। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এখানে নেই। ওষুধ সরবরাহ অপ্রতুল। এক সপ্তাহের জন্য বরাদ্দ করা ওষুধে চার-পাঁচ দিন চলে। বিশেষ করে ড্রেসিংয়ের জন্য অতি প্রয়োজনীয় বেয়োনেট সরবরাহ নেই গত এক মাস ধরে। এছাড়া আগুনে পোড়া রোগীকে গরম স্থানে রাখা প্রয়োজন। কিন্তু বেড না থাকার ফলে তাদের মেঝেতে রাখতে হয়। যা শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে।’

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, ‘বার্ন ইউনিটে চিকিৎসকের সংকট তীব্র। এ বিভাগে সুষ্ঠু চিকিৎসার জন্য কমপক্ষে সাত জন চিকিৎসক দরকার। কিন্তু আছেন মাত্র একজন। চিকিৎসক পাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চিঠি দিয়েও কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। আর সুষ্ঠু চিকিৎসার জন্য সরবারাহ করা ওষুধ পর্যাপ্ত নয়। রোগীর চাপ অনুযায়ী চিকিৎসা সম্পন্ন করতে ওষুধের সরবরাহ আরও বাড়ানো প্রয়োজন।’