জয়ের পথে তাপস-আতিক

3


সর্বশেষ প্রাপ্ত ফলে ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে এগিয়ে আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম ও দক্ষিণে ফজলে নূর তাপস: কোথাও কোন গোলযোগ, ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেনি: নতুন যুক্ত ওয়ার্ডে ভোটার উপস্থিতি বেশি


* আসাদুজ্জামান ইমন, ঢাকা
ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে নিশ্চিত জয়ে পথে রয়েছে আওয়ামী লীগের মোঃ আতিকুল ইসলাম ও শেখ ফজলে নূর তাপস। ঢাকা দক্ষিণে ১ হাজার ১৫০ কেন্দ্রের মধ্যে ৯৭৯ কেন্দ্রের ফলে তাপস মোট ভোট পেয়েছেন ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৩২ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ইশরাক হোসেন পেয়েছেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৭৫ ভোট। উত্তরের ১ হাজার ১৫০ কেন্দ্রের মধ্যে ৭৩৯ কেন্দ্রের ফলে মোঃ আতিকুল ইসলাম ভোট পেয়েছেন ২ লাখ ৩৫ হাজার ২৩৪ ভোট। অপরদিকে বিএনপির তাবিথ আউয়াল পেয়েছেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৫৫ ভোট।
এদিকে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হলেও ভোটার উপস্থিতি ছিল অনেক কম। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। গোলযোগ বা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনারও খবর পাওয়া যায়নি। তবে ইভিএমে ভোট নিয়ে তৈরি হয়নি বড় ধরনের জটিলতা। এদিকে কম ভোটার উপস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন স্বয়ং প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। উত্তরার একটি কেন্দ্রে ভোট দিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। শেষ পর্যন্ত ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। তবে উপস্থিতি কম হলেও নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সিইসি। তিনি জানান, সিটি নির্বাচনে ভোটের হার ৩০ শতাংশের বেশি নয়।
ঢাকার দুই সিটিতে নতুন যোগ হওয়া ৩৬ ওয়ার্ডে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে পেরেছেন সাধারণ ভোটাররা। সকাল থেকে নারী পুরুষ লাইন ধরে ভোট দিয়েছেন। ইভিএমে ভোট দিয়ে তারা স্বস্তি প্রকাশ করেন। ঢাকার উত্তরে উত্তরখান এলাকাটি সিটি কর্পোরেশনের ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে অবস্থিত। ওয়ার্ডটি এই সিটির সঙ্গে নতুন যোগ হয়েছে। উত্তরখান ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে নারী-পুরুষ ভোট দেয়ার জন্য লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এছাড়া লাইনের বাইরে মাঠ ভর্তি অপেক্ষমাণ ভোটার। এই কেন্দ্রের পরিবেশ ছিল যেমন উৎসবমুখর তেমনি সব প্রার্থীর এজেন্টদের সরব উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।


বেলা ১টায় সরেজমিন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে প্রচুর ভোটার ভিড় জমিয়েছেন। কেউ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেয়ার অপেক্ষা করছেন। নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। কেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রিসাইডিং অফিসার মোঃ এনায়েতুর রহমান শেখ বলেন, কেন্দ্রটির মোট ভোটার ২ হাজার ৫৯২ জন। সকাল থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে। দুপুর পর্যন্ত শতকরা ২০ ভাগ ভোট পড়েছে। তিনি জানান, ভোটারদের যে চাপ বাড়ছে তাতে শেষ পর্যন্ত ৬০ ভাগ হতে পারে। তিনি জানান, সব প্রার্থীর এজেন্ট সকাল থেকে উপস্থিত ছিলেন। এদিকে কেন্দ্রে বাইরের পরিবেশ ছিল উৎসবমুখর। সব প্রার্থীর কর্মী-সমর্থককে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করতে দেখা গেছে। এদিকে ঢাকা উত্তরের ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের আমজাদ আলী স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল সন্তোষজনক। মধ্য আজমপুরে অবস্থিত এই ওয়ার্ডটিও ঢাকার উত্তরের সঙ্গে নতুন যোগ হয়েছে।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির কামরাঙ্গীরচর এলাকায় অবস্থিত ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড। ওয়ার্ডটি ঢাকা সিটির সঙ্গে নতুন যোগ হয়েছে। কামরাঙ্গীরচরের ওয়াজউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে কেন্দ্রের ভোটার উপস্থিতি ছিল সন্তোষজনক। সকাল থেকে ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশ ভোট দিয়েছেন। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৮২৫ জন। এই কেন্দ্রেও নারী-পুরুষ ভোটারদের লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে দেখা গেছে। ভোটাররা জানান, এবার নতুন পদ্ধতিতে ইভিএমে ভোট দিতে ভালই লেগেছে। ইভিএমে ভোট দেয়া খুব সহজ। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মোঃ কুদ্দুস জনকণ্ঠকে বলেন, সকাল থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হচ্ছে। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভোটার উপস্থিতিতে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এদিকে নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ড বাদ দিলে বাকি কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারেই নগন্য। তবে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম হলেও কেন্দ্রের বাইরের আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এসব কর্মী সমর্থকদের বেশিরভাগকেই কেন্দ্রে প্রবেশের মুখে গেটেই ভিড় জমাতে দেখা গেছে। এর বাইরে ভোটার স্লিপ দেয়ার জন্য একাধিক বুথ থাকলেও সেখানে ভোটার সমাগম ছিল না বললেই চলে। নির্বাচনে কম ভোটার উপস্থিতি নিয়েও কথা বলেছেন ঢাকা দক্ষিণের আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, গণসংযোগে যখন গিয়েছি আশা করেছিলাম যে আরও ভোটার উপস্থিতি থাকবে। কারণ যে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পেয়েছিলাম এবং আশা করেছিলাম সকলে এসে ভোট দেবেন। তবুও যারা ভোট দিতে এসেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।


ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, দেশ উন্নতির দিকে যাচ্ছে বলেই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম। দেশ উন্নত হচ্ছে, উন্নত দেশেও ভোটার উপস্থিতি কম থাকে। দেশ উন্নতির দিকে যাচ্ছে, তার প্রমাণ হলো ভোটার উপস্থিতি কম হওয়া। তিনি আরও বলেন, উন্নত দেশগুলোতে মানুষের ভোট দেয়ার হার কম থাকে। শুক্র ও শনিবার দুদিন ছুটি থাকায় ঢাকার বাসিন্দাদের অনেকেই বাইরে বেড়াতে গেছেন।
এদিকে সাধারণ ভোটারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে তারাও বলেন সরস্বতী পূজা এবং শুক্র ও শনিবার দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকার কারণে ভোটার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম। মিরপুরের দুজন ভোটার এ বিষয়ে এই প্রতিবেদকের কাছে প্রতিক্রিয়া দেখান। তারা বলেন, তিনদিনের ছুটি পেয়ে সবাই পরিবার পরিজন নিয়ে ঢাকার বাইরে চলে গেছেন। আর এর প্রভাব পড়েছে ঢাকা সিটি নির্বাচনে।
এদিকে অধিকাংশ কেন্দ্রেই বিএনপির প্রার্থীর কোন এজেন্টকে দেখা যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ এজেন্ট সকাল থেকেই কেন্দ্রে হাজির হননি। সকাল ১০টায় রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত ঢাকা কমার্স কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, গেটের বাইরের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা ভিড় করছেন। ভেতরে প্রবেশ করে কোন ভোটার খুঁজে পাওয়া যাযনি। বিএনপির মেয়র প্রার্থীসহ অন্যান্য প্রার্থীর এজেন্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি। বেলা সাড়ে ১০টায় একটা বুথে গিয়ে দেখা গেল মাত্র ২টি ভোট পড়েছে। ভোটার না থাকায় ভোট কক্ষে কোন প্রার্থীর এজেন্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার শাহারিয়ার জনকণ্ঠকে বলেন, মেয়র প্রার্থী আতিকুলসহ কয়েক প্রার্থীর এজেন্ট এলেও বিএনপির কোন এজেন্ট আসেননি। তবে কেন আসেননি তা কেউ বলতে পারেননি। তবে প্রায় সব কেন্দ্রে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে দেখা গেছে বিএনপির কোন এজেন্টকে ভয়ভীতি দেখানোর ঘটনা ঘটেনি। কেন্দ্রে প্রবেশের পর তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে এমন ঘটনাও ঘটেনি।
এদিকে ইভিএমে ভোট দেয়ার নতুন অভিজ্ঞতায় ভোটার প্রায় সবাই স্বস্তি প্রকাশ করছে না। রাজধানীর শাহ আলী মহিলা ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বের হওয়া কয়েকজন বলেন, ইভিএমে ভোট দেয়া অনেক সহজ। প্রথমে খুব ভয় লাগছিল। কিন্তু ভোট দেয়ার পর মনে হয়েছে এই পদ্ধতিতে ভোট দেয়া আরও সহজ। এদিকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্ট উপস্থিত না হলেও বিএনপিরা প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন তাদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে বিষয়টির সত্যতা মেলেনি। সকাল থেকে ভোটের পরিবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা পরিবেশ ছিল সন্তোষজনক। কোন গোলযোগ ছিল না বেশিরভাগ কেন্দ্রে। এই পরিস্থিতির মধ্যে বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে অনেক ক্ষেত্রে আঙ্গুলের ছাপ না মেলায় ভোটারদের বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়েছে। পরে জাতীয় পরিচয়পত্র এনে ভোট দিতে হয়েছে।
বেলা সাড়ে ১১টার সময় ঢাকা উত্তরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল উত্তরার নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন। এ সময় ওই কেন্দ্রে বেশিরভাগ বুথে বিএনপির এজেন্ট ছিলেন না। তবে তাবিথ আউয়াল কেন্দ্রে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে অনেকে তার কাছে এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগ করেন। তবে পরে তাবিথ তার এজেন্টদের নিয়ে কক্ষে বসিয়ে দেন। এই সময় ঢাকা উত্তরের এক নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন তার ওপর হামলার অভিযোগ আনেন।
তবে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হলেও নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল সন্তোষজনক। সব কেন্দ্রে পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর বেশ সরব উপস্থিতি ছিল। ফলে কেন্দ্রের ভেতরে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কেন্দ্রের বাইরেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল সন্তোষজনক। ফলে কোন কেন্দ্রে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সুষ্ঠুও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দক্ষিণে ২০ ভাগ এবং উত্তরে ২৩ ভোট পড়েছে: এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ আবদুল বাতেন জানিয়েছেন, বিকেল ৩টা পর্যন্ত সাত ঘণ্টায় ঢাকা দক্ষিণে ২০ শতাংশ ভোট পড়েছে। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ আবুল কাসেম জানিয়েছেন, একই সময়ে ডিএনসিসিতে ২৩ শতাংশ ভোট পড়েছে।