- ঢাকা অফিস
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে তার প্রতিবাদে আজ রোববার ঢাকায় হরতাল ডেকেছে বিএনপি। শনিবার ভোট শেষে রাতে ফল ঘোষণার মধ্যে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। রাত ৮টার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যখন এই সংবাদ সম্মেলন করেন, সে সময় দুই সিটিতেই ভোটের ফলে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা এগিয়ে ছিলেন। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, “ঢাকা সিটি করপোরেশনের উত্তর ও দক্ষিণে নির্বাচনের ফলাফলকে আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। দুই সিটির নির্বাচনে ভয়াবহ রকমের কারচুপি, জালিয়াতি, জবরদস্তি করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কারণে এবং জনগণের রায়কে একেবারে পদদলিত করে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এই নির্বাচনকে প্রভাবিত ও লুট করে ফলাফল নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি। “এর প্রতিবাদে আমরা আজ (রোববার) সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকা শহরে হরতাল আহ্বান করছি। আমরা আশা করব, ঢাকাবাসী তাদের অধিকার রক্ষার জন্য শান্তিপূর্ণভাবে এই হরতাল পালন করবে এবং গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য সহযোগিতা করবেন।” অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ি, ওষুধ ও খাবারের দোকান হরতালের আওতামুক্ত থাকবে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি ওই নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তি ঘিরে ২০১৫ সালের শুরু থেকে টানা তিন মাস হরতাল-অবরোধ করে। এরপর এই প্রথম হরতালের ডাক দিল তারা। পাঁচ বছর আগের ওই আন্দোলনের সময় বাসে আগুন ও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপসহ নাশকতার নানা ঘটনায় দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ওই আন্দোলনে গিয়ে বিএনপির ‘ক্ষতি’ হয়েছিল স্বীকার করে মির্জা ফখরুল কয়েক দিন আগেই বলেছিলেন, সেই ক্ষত সারাতে এখনও তাদের বেগ পেতে হচ্ছে। তাই হঠাৎ করে হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চান না তিনি।
গত ১৭ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে ফখরুল বলেছিলেন, “আমরা আজকে হঠাৎ করে হঠকারী কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে চাই না। আমাদের অভিজ্ঞতা আছে ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময়ে এবং ২০১৫ সালের আন্দোলনের সময়ে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে এখনও আমাদের অনেক বেগ পেতে হচ্ছে।” এই উপলব্ধি প্রকাশের পর দুই সপ্তাহ না হতেই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগ তুলে হরতালের ডাক দিল বিএনপি। মির্জা ফখরুল বলেন, এই নির্বাচন নিয়ে তারা যে আশঙ্কা করেছিলেন, সেই আশঙ্কা সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। “এই নির্বাচনেও সরকার পূর্বের নির্বাচনের মতোই রাষ্ট্রীয় যন্ত্রকে ব্যবহার করে, নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করে তাদের মতো করে দখল করে নিয়েছে।” আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত সচেতনভাবে ‘গণতন্ত্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, একটি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। সেটাই তারা এখন করতে যাচ্ছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন যেভাবে গঠন করা হয়েছে তাদেরকে ক্রীড়ানক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগের অধীনে কখনও নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না।” এদিকে রাজপথে থেকে বিএনপির এই কর্মসূচি প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি হরতালের ডাক দেওয়ার পর বনানীতে মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামের নির্বাচনী কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, “উত্তর ও দক্ষিণে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরাও নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ উত্থাপন করে নাই। বিএনপি শুধু পরাজয়ের আশঙ্কায় যখন নিশ্চিত পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে সে সময় তড়িঘড়ি করে এই হরতাল ডেকে বিএনপি আসলে তাদের রাজনৈতিক দীনতা প্রমাণ করেছে।”
জনগণের ‘স্বার্থবিরোধী ও জনগণবিরোধী’ কোনো কর্মসূচি এই বাংলাদেশের জনগণ ‘বরদাস্ত করবে না’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। হরতাল প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে হানিফ বলেন, “নিজেদের পরাজয়ের লজ্জাজনক ব্যর্থতা ঢাকার জন্য হরতালের মতো কোনো অগণতান্ত্রিক কর্মসূচি ঢাকা শহরবাসী মেনে নেবে না। এবং আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীসহ জনগণ প্রস্তুত আছে এই ধরনের যে কোনো অপতৎপরতাকে কঠোরভাবে প্রতিহত করার জন্য।”