খুলনাঞ্চল ডেস্ক
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে মাত্র এক দিনের ব্যবধানে জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহীনবাগে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর পরপর গুলি চালানোর ঘটনা ঘটার পর বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে এসব সহিংসতায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। উত্তরপ্রদেশে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী যোগী অদিত্যনাথ শনিবারও দিল্লিতে নির্বাচনী প্রচারে এসে ঘোষণা করেছেন, “কেউ যদি যুক্তি শুনতে না চায় তাহলে বুলেট দিয়েই তাকে বোঝাতে হবে।” এর আগে বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরও প্রকাশ্য জনসভা থেকে ‘বেইমান’দের গুলি চালিয়ে মারার স্লোগানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। দিল্লিতে যারা ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, তাদের মতে বিজেপি নেতাদের এসব কথাবার্তা আসলে “হাতে বন্দুক তুলে নেওয়ারই নির্দেশ!” দিল্লিতে আগামী শনিবারের ভোটের আগে সদ্যই নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। আর শহরে পা রেখেই তিনি ঘোষণা করেছেন, “বিজেপি দেশের শত্রুদের সঙ্গে কথা বলবে না, সরাসরি গুলি চালাবে। কংগ্রেস জমানার মতো বিরিয়ানি নয়, বুলেট খাওয়াবে।” রোহিণীর এক জনসভায় আদিত্যনাথ যখন এ কথা বলছেন, প্রায় সে সময় শহরের অন্য প্রান্তে শাহীনবাগে কপিল গুজ্জর নামে এক ব্যক্তি ‘হিন্দুরাষ্ট্র জিন্দাবাদ’ বলে দুরাউন্ড গুলি চালিয়ে দিয়েছেন। সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শামসুদ্দিন আলি বলছিলেন, “বিজেপি নেতারা যেভাবে লাগাতার উসকানিমূলক ভাষণ দিয়ে চলেছেন এগুলো তারই পরিণতি বলে মনে করি।”
“অমিত শাহের ছেলের তো ক্রিকেট বোর্ডের সচিবের চাকরি জুটে গেছে, কিন্তু অন্য সব বেকার ছেলেরা এসব শুনে বন্দুক হাতে রাস্তায় নেমে পড়ছে।” এর কদিন আগেই দিল্লিতে বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুরের নেতৃত্বে গদ্দারদের গুলি মারার স্লোগান উঠেছে, আর তার পর পরই জামিয়াতে দিল্লি পুলিশের উপস্থিতিতেই ছাত্রছাত্রীদের দিকে গুলি চালায় আর এক বন্দুকধারী যুবক। জামিয়া মিলিয়ার ছাত্র ইফতিকার বিশ্বাস করেন, “দিল্লি পুলিশের চোখের সামনে যেভাবে ওই ছেলেটি গুলি চালাতে পেরেছে, তা তাদের সক্রিয় সমর্থন ছাড়া সম্ভব নয়।” “দিল্লি পুলিশের অভিসন্ধি এই ঘটনায় সারা দুনিয়ার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে” বলেও তিনি মন্তব্য করেন। বস্তুত একের পর এক বিজেপি নেতা যেভাবে প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর কথা বলছেন, তার কড়া নিন্দা করছেন বিরোধী রাজনীতিবিদরাও। সিপিআই নেতা ডি রাজা যেমন আদিত্যনাথের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে বলছিলেন, “শুধু তিনি একাই নন – স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে শুরু করে সব বিজেপি নেতাই এক সুরে কথা বলছেন।” “নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে তারা হিন্দু-মুসলিম ইস্যু হিসেবে তুলে ধরে বিভাজনের রাজনীতি করতে চাইছেন।” ভারতের বিখ্যাত আইন বিশেষজ্ঞ ও নালসার ইউনিভার্সিটি অব ল-র উপাচার্য ড: ফায়জান মুস্তাফাও মনে করেন যোগী আদিত্যনাথ বা অনুরাগ ঠাকুরের ভাষণ ফৌজদারি অপরাধের পর্যায়েই পড়ে।
তিনি বলছিলেন, “বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অপরাধ কিন্তু কেউ একা করে না – তাতে অন্যদেরও ভূমিকা থাকে।” “এখানে বিজেপি নেতারা হয়তো নিজেরা গুলি চালান নি, কিন্তু মঞ্চ থেকে সেই নির্দেশ দিয়ে তারা আসলে ওই অপরাধেই মদত দিয়েছেন।”
মাত্র তিনদিনের জন্য অনুরাগ ঠাকুরের প্রচারণা নিষিদ্ধ করা ছাড়া নির্বাচন কমিশন অবশ্য এখনও এসব ক্ষেত্রে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থাই নেয়নি। মুখ্যমন্ত্রী অদিত্যনাথের ক্ষেত্রে সেটুকুও হয়নি, তিনি বিনা বাধাতেই দিল্লিতে প্রচার চালাতে পারছেন। সূত্র : বিবিসি বাংলা।