- ঢাকা অফিস
ঢাকা বাদে অন্যান্য জেলার গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত থমকে যেত সামান্য ফরেনসিক পরীক্ষার কারণে। আগে সারাদেশের মামলার ফরেনসিক পরীক্ষা হতো ঢাকায় সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে। ফলে মামলার তদন্তে দীর্ঘসূত্রীতা দেখা দিত। তবে মামলার তদন্তে দীর্ঘসূত্রীতা কমাতে এবার ঢাকা, চট্টগ্রামের পাশাপাশি রাজশাহীতেও খোলা হচ্ছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. মো. জাবেদ পাটোয়ারী ফরেনসিক ল্যাবটির উদ্বোধন করবেন। ল্যাবে মামলা তদন্তে ৯ ধরনের সুবিধা পাবে রাজশাহী ও রংপুর রেঞ্জের ১৬ জেলা ও দুটি মহানগরের সব থানা পুলিশ। সিআইডি জানায়, নতুন এ ল্যাবটির মাধ্যমে যে কোনো কুলেস মামলার বিভিন্ন আলামত, ডিএনএ ও সাইবার টেস্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ আলামত পরীক্ষা করা যাবে। ল্যাবে রাসায়নিক, ব্যালিস্টিকস, হস্তলিপি, ফিঙ্গার প্রিন্ট, অনু বিশ্লেষণ, ফুট প্রিন্ট ও জালনোট শনাক্তের ব্যবস্থা রয়েছে। এরমধ্যে রাসায়নিক পরীক্ষাগারে ভিসেরা, নারকোটিক ও এসিড টেস্টসহ আরও কয়েকটি আইটেম পরীক্ষা করা হবে।
অন্যান্য ফরেনসিক ল্যাবের মতো এটিতেও সব ধরনের মাদকদ্রব্য, মৃত মানুষ ও পশু-পাখির ভিসেরা, কবর থেকে উত্তোলিতক হাড়, চুল, মাটি ও সফট টিস্যু, বিষাক্ত বা চেতনাশক পদার্থের উপস্থিতি, রক্ত মিশ্রিত আলামতে রক্তের উপস্থিতি, এসিড মিশ্রিত আলামতে রক্তের উপস্থিতি, বিষ্ফোরক দ্রব্য, দাহ্য পদার্থ, জাল টাকা তৈরিতে ব্যবহৃত কেমিক্যাল, জিএসআরসহ বিভিন্ন আলামতের রাসায়নিক বিশ্লেষণ করা যাবে। এ বিষয়ে সিআইডির ফরেনসিক শাখার ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া নানা অপরাধের রহস্য উদঘাটনে ঢাকার ফরেনসিক ল্যাবে যোগাযোগ করতে হয় সংশ্লিষ্টদের। এতে সময় বেশি প্রয়োজন হয়। ফলে মামলার তদন্ত কাজ আটকে থাকে। এ জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে ফরেনসিক ল্যাব বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে রাজশাহীর এ ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ল্যাবটির যাত্রা শুরু হলে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোর সব পরীক্ষা সেখানেই করা হবে। ফলে সময় এবং তদন্ত কাজও এগিয়ে চলবে।
সিআইডি জানায়, তাদের ফরেনসিক ল্যাব থেকে গাড়ির ইঞ্জিন, চেসিস নম্বর, আগ্নেয়াস্ত্রের নম্বর, ট্রেডমার্ক তৈরিকারী দেশের নাম এবং কোনো ধাতব বস্তু মুছে ফেলা বা বিকৃত করা, ক্রমিক নম্বর সংখ্যা বা যে কোনো চিহ্নের বিষয়েও মতামত দেয়া যাবে পরীক্ষা করে। পায়ের বা জুতার ছাপ পরীক্ষা করে অপরাধী বা ভুক্তভোগী শনাক্তে বিশেষজ্ঞ মতামত পাওয়া যাবে। আর অপরাধস্থল পরিদর্শন করে বস্তুগত সাক্ষ্য সংগ্রহ, ডকুমেন্টেশন, সংরক্ষণ করে বস্তুগত সাক্ষ্য সংশ্লিষ্ট থানা বা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দেবে ক্রাইম সিন ইউনিট। ল্যাবের ফিঙ্গার প্রিন্ট শাখায় থাকবে ক্রাইমসিন থেকে সংগৃহীত দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান আঙ্গুলের ছাপের সঙ্গে সন্দেহভাজনদের আঙ্গুলের ছাপের তুলনামূলক পরীক্ষা। ডাটাবেজে সংরক্ষিত ফিঙ্গার প্রিন্টের সঙ্গে তল্লাশি করে মিল বা অমিল সম্পর্কে মতামত দেয়া।
ল্যাবের হস্তলিপি শাখায় রয়েছে বিচারাধীন দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলায় বিবাদমান দলিলের লেখা বা স্বাক্ষর জাল, নম্বর ঘষামাজা করে বা রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার করে অবমোচন করা হলে তা পরীক্ষা করে মতামত দেয়ার ব্যবস্থা। ল্যাবে একটি জালনোট ও মেকিমূদ্রা শাখা থাকবে। এ ল্যাবে দেশি-বিদেশি সকল কারেন্সি নোট ও কয়েন বা ধাতব মূদ্রার বিষয়ে ভিডিও স্পেট্রাল কম্পারেটরের মাধ্যমে নোটের দৃশ্য-অদৃশ্যমান বৈশিষ্টগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে মাতমাত দেয়া হবে। ফটোগ্রাফি শাখায় অপরাধীদের ছবি গ্রহণ, সংরক্ষণ, ফরেনসিক বিভিন্ন শাখার আলামতের বর্ধিত ছবি সরবরাহ এবং বিতর্কিত ছবির সঙ্গে নমুনার মিল আছে কী-না তা বিশ্লেষণ করা হবে। ল্যাবের ব্যালিস্টিক শাখায় আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট কোনো অপরাধের ঘটনায় উদ্ধারকৃত বা অপরাধে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র, কার্তুজ ও ফায়র্ড বুলেট বা এসবের কোনো অংশ বিশেষ পরীক্ষা করা হবে। ল্যাবে একটি পদচিহ্ন শাখা থাকবে। এ শাখায় পায়ের বা জুতার ছাপ পরীক্ষা করে অপরাধী বা ভুক্তভোগী শনাক্ত করে তদন্ত কর্মকর্তাকে মতামত দেয়া হবে।