- মোঃ শামীম হোসেন, বাজুয়া
দাকোপ উপজেলার বাজুয়ায় এবার আমনের বাম্পার ফলন বুলবুল ঝড়ে লন্ডভন্ড করে দেওয়ার পর আবার এই হাটে মন প্রতি ধানের দাম ৫০ টাকা কমে যাওয়ায় চাষীদের মুখে নাই আনন্দের হাসি। চলতি মৌসুমে বাজারের সকল পণ্যের সাথে তালমিলিয়ে ধানের দাম বৃদ্ধি না হওয়ায় বাজুয়ার আমন চাষীরা মহাবিপাকে। জানা যায়, সম্প্রতি বাজারের সকল পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হওয়া স্বত্তেও একমাত্র কৃষিপণ্য ধানের মূল্য চরম ভাবে হ্রাস হওয়ায় শুধুমাত্র বাজুয়ার কৃষকরাই নয়, এর ফলে বাংলাদেশের শতকরা ৮০% কৃষক একেবারেই দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কৃষকদের কাছ থেকে জানা যায় যে, বর্তমানে বাজারে ইরি ধানের মূল্য ৬০০থেকে ৬৪০টাকা, নুনাকচ্চি মোটা ধান ৮৫০থেকে ৯০০টাকা, টেন-তিরিশ ধান ৬৮০থেকে ৭০০টাকা দরে প্রতি মন ধান বিক্রয় হচ্ছে। এর ফলে স্বল্পবিত্ত, নিম্ন বিত্ত ও মধ্য বিত্ত চাষীরা পথে বসতে বসেছে কেননা তারা চাষের শুরুতে ধার দেনা করে ঔষধ, সার এবং কীটনাশক ক্রয় করে এমনকি সপ্তাহে ৩০০০-৩৬০০টাকা দিনমজুর ধরে জমিতে ধান রোপন করে। লাউডোব ইউনিয়নের আমন চাষী শ্যামল সরদার জানান যে, এবার বিঘা প্রতি তার জমিতে ধান হয়েছে ৭মন থেকে ৯মন। তিনি আরো বলেন একবিঘা জমি করতে যে খরচ হয়েছে তা ধান বিক্রয় করে তাদের খরচ উঠবে না। বাজুয়া বাজারে ধান বিক্রয় করতে এসে সুপদ মন্ডল জানান, বর্তমান বাজারে ধানের যে মূল্য তাতে ধান বিক্রয় করলে কৃষকদের চাষের খরচ বাদ দিলে তারা জমির খাজনাও দিতে পারবে না। এমনকি সারা বছর কৃষকদের না খেয়ে থাকতে হবে এবং তাদের খালি হাতেই ঘরে ফিরতে হবে অথচ বাজারের নৈমিত্তিক ব্যবহার্য্য দ্রব্যের মূল্য আকাশচুম্বি হওয়ায় কৃষকরা স্বর্বশানাত হতে বসেছে। এর ফলে সামনে কৃষকদের খুজেও পাওয়া যাবে না এভাবে যদি ধান বিক্রয় করতে হয়। এমতাবস্থায় কৃষকদের বাঁচাতে হলে সরকারকে বাজারের অন্যান্য দ্রব্যের সাথে মিল রেখে ধানের দাম অবিলম্বে বৃদ্ধি করতে হবে। তা না হলে বাজারে ধান ব্ক্রিয় করতে এসে আতœহত্যার মত ঘটনা কৃষককুলের মধ্যও দেখা যাবে বলে এলাকার জনগণের অভিমত। বাজারে ধানের দাম কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খুলনা থেকে বাজুয়া বাজারে ধান কিনতে আসা ব্যাপারি হালিম শেখ জানায় বাজারে চাউলের দাম কম থাকায় এবং গত বছরের ধানের চাউল এখনও আমাদের বিক্রি হয়নি এর ফলে বাজারে ধানের দাম কম তবে চাউলের দাম বাড়লে ধানের দামও বাড়বে বলে তিনি আশা করেন। বাজুয়া বাজারের ক্ষুদ্র ধান চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কানু সাহার নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজারে চাউলের তেমন চাহিদা না থাকায় এবছর এই ধানের দাম খুবই কম এতে আমাদের কোন হাত নাই।
কৃষকদের মধ্যে থেকে ইউপি সদস্য দীনবন্ধু মন্ডল বলেন আমন ধানের ফলন গত বছরের চেয়ে অর্ধেক হওয়ায় এবং দরপতনে খুলনার দাকোপের বিভিন্ন এলাকার কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছে। পরিবার – পরিজন নিয়ে সারাবছর কি খেয়ে বাঁচবেন এই দুচিন্তায় এখন কৃষকের চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ১৮ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার ও কৃষিবিদ মোঃ মেহেদী হাসান জানান , এ বছর ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে অধিকাংশ ধানক্ষেত আক্রান্ত হয়ে ধানে চিটে হয়ে গেছে। যে কারণে ফলন কম হয়েছে। তবে সরকার পদক্ষেপ নিলে ধানের দাম বাড়তে পারে।