আনন্দের রেশ না কাটতেই ৫ মরদেহ পরিবারের কাঁধে

3
Spread the love
  • খুলনাঞ্চল রিপোর্ট


গেল সপ্তাহে (২২ জানুয়ারি) ধুমধাম করে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন সুভাষ রায়। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) মেয়ের বৌভাত শেষ করে কান্তশরীরে ঘুমিয়েছিলেন। সেই ঘুম থেকে আর জাগতে পারেননি তিনি। ভয়াবহ অগ্নিকা-ে তিনিসহ তার পরিবারে দুই সদস্য ও দুই নিকটাত্মীয় প্রাণ হারান। আত্মীয়ের বিয়েতে হবিগঞ্জ থেকে স্ব-পরিবারে মৌলভীবাজারে এসেছিলেন দিপা রায় (৩৫)। বিয়ে শেষ হলেও সোমবার ছিল বৌভাত অনুষ্ঠান। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে পরিবারের সঙ্গেই হবিগঞ্জে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল আজকালের মধ্যেই। কিন্তু তার আর ফেরা হলো না। তিন বছর বয়সী শিশুকে নিয়ে না ফেরার দেশে তিনি পাড়ি জমিয়েছেন। এমনই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন মৌলভীবাজারে সেন্ট্রাল রোডের (এম সাইফুর রহমান রোড) পিংকি সু স্টোরে অগ্নিকা-ের নিহতরা। সেন্ট্রাল রোডে ওই দু’তলা ভবনের নিচ তলায় সুভাষ রায় পিংকি সু স্টোর নামে একটি জুতার দোকান পরিচালনা করতেন এবং দ্বিতীয় তলায় ভাই ও তার পরিবার নিয়ে থাকতেন। নিহতদের মধ্যে দিপা রায় ও বৈশাখী সুভাষের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানে আসেন। তারা হবিগঞ্জের উমেদনগরের বাসিন্দা।
জানা যায়, সুভাষ রায়ের মেয়ের পিংকির বিয়ে গত ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। বিয়ে উপলক্ষে আত্মীয়রা বাসায় আসেন। সোমবার মেয়ের বউভাত শেষে বাসায় ১২জন সদস্য অবস্থান করেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ভবনের নিচ তলায় তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে তা পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় কান্ত সবাই তখন ঘুমে ছিলেন। আগুন টের পেয়ে পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের ৭ জন আশপাশের বাসিন্দাদের সহায়তায় বেরিয়ে আসেন। কিন্তু ভয়াবহ আগুনের কবলে আটকা পড়েন ৫ জন। ঘটনাস্থলেই দগ্ধ হয়ে তারা মারা যান। পরে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে এনে তাদের মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে।
নিহতদের পরিবারের নিকটাত্মীয় কল্প রায় বলেন, বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা প্রায় শেষের দিকে ছিল। গতকাল বৌভাত অনুষ্ঠান শেষ করে রাতে আমরা সবাই আনন্দ করেছি। এর মধ্যে আমি অন্যত্র চলে আসি আর ওই বাসাতে তাদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীস্বজনসহ ১২জন অবস্থান করেন। সকালের অগ্নিকা-ের ঘটনায় আমরা খবর পেয়ে কয়েকজনকে উদ্ধার করি। কিন্তু আগুনের তীব্রতা এমন ছিল যে তাদের পাঁচজনকে বের করে আনা যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা রূপম আচার্য্য জানানা, বাসার অবস্থা এমন ছিল যে ঘর থেকে বেরিয়ে আসার বিকল্প ছিল না। সদর দরজা দিয়ে তাৎক্ষণিক যাদের সম্ভব হয়েছে বের করে এনেছি। কিন্তু আগুন এতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল যে পুরো ভবন ধোঁয়া আর আগুন। কেউ কিছু দেখতেই পায়নি। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে এ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট দুপুর ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে ওই ভয়াবহ ঘটনায় সহকারী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া সুলতানাকে প্রধান করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন। এছাড়া প্রাথমিক অবস্থায় নিহতদের পরিবারকে এক লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মল্লিকা দে বলেন, আমরা এ ঘটনায় শোকাহত। ঘটনার কারণ আমার তদন্ত করে দেখছি। প্রাথমিক অবস্থায় তাদের পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।