‘হাই ফ্রেন্ডস, আমরা কাল জেলে থাকতে পারি!’, ফেসবুক লাইভে এসে ৪ তরুণের হেসে হেসে বলা এই কথা ভাইরাল হয়ে সংবাদের জন্ম দিয়েছে, জন্ম দিয়েছে জনমনে ক্ষোভের। কারণ এক কিশোরীকে গণধর্ষণের পরে তারা উল্লাস প্রকাশ করে এই কথাগুলো বলেছে।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর এলাকায় জন্মদিনের অনুষ্ঠানে এক কিশোরীকে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে গণধর্ষণের অভিযোগে ওই চার যুবককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, শরীফ হোসেন, তার বন্ধু ইমরান হাসান সুজন, শরিফ উদ্দিন মোল্লা ও আহসান হাসান। প্রাথমিকভাবে তারা ওই ঘটনায় স্বীকারোক্তিও দিয়েছে বলে গণমাধ্যমে এসেছে। ঘটনায় ওই যুবকদের ঔদ্ধত্য জনগণকে বিস্মিত করেছে।
গত কয়েকবছরে দেশজুড়ে কিশোর-তরুণদের মাধ্যমে বনানীতে আবাসিক হোটেলে ধর্ষণ থেকে শুরু করে বরগুনায় সিফাত হত্যাসহ বহু অপরাধকর্ম হয়েছে। বিগত কয়েকযুগের অপরাধ কর্মের সঙ্গে বর্তমানের অপরাধ বিশ্লেষণ করে দেখলে হয়তো সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর-তরুণদের এই অপরাধে যুক্ত হবার হার চমকে দেবে জাতিকে। প্রশ্ন উঠতে পারে কেন যুক্ত হচ্ছে কিশোর-তরুণরা?
সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, কিশোর-তরুণদের অপরাধ প্রবণতার মূলে রয়েছে সামাজিক অবক্ষয় ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন। পরিবারসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছোটবয়স থেকে নৈতিক মূল্যবোধের সঠিক চর্চার অভাবে ধীরে ধীরে একদিন বেপরোয়া হয়ে ওঠে। অপরাধ কর্মের বিভিন্ন শাখায় তারা জড়িয়ে পরে নিজের অজান্তেই।
মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে বড় পার্থক্য হল, মানুষ নৈতিকতাসম্পন্ন জীব, অন্য প্রাণী তা নয়। ন্যায় আর সত্যের পথ অনুসরণ করে অন্যের ক্ষতি না করে যতটুকু সম্ভব উপকার করা, অপরের কল্যাণ করা প্রতিটি নৈতিকতাসম্পন্ন মানুষের কাজ। মানবজীবনের উন্নয়নে ও মানবকল্যাণের সব বিষয়ের প্রধান নির্ণায়ক হল নৈতিকতা।
কিন্তু সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে ছোট-বড় অপরাধকে অপরাধ মনে না করে স্বাভাবিক ভাবার ক্রমবর্ধমান মানসিকতা ও চর্চার ফলে সমাজে বাস করা কিশোর-তরুণ সবাই ধীরে ধীরে নৈতিকতা হারিয়ে ফেলে। বর্তমান সময়ে এর হার মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ গাজীপুরের শ্রীপুরের ওই ঘটনা। গণধর্ষণের মতো মারাত্মক একটি অপরাধ করেও তাদের মনে কোনো অপরাধবোধ ছিল না। বিষয়টি খুবই চিন্তার!
একদিন দুইদিনে অবস্থার সমাধান হবে না বলে আমরা মনে করি। তবে আমাদের ধারণা, শিশুকাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়ক্রমে সঠিক নৈতিক শিক্ষা কার্যক্রম থাকলে এই অবস্থার পরিবর্তন আসতে বাধ্য। শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি পরিবার ও সমাজকে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। কীভাবে কোন প্রক্রিয়ায় কাজ করে নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে অপরাধ কার্যক্রমে কিশোর-তরুণদের প্রবেশ ঠেকানো যায়, এবিষয়ে গবেষণাসহ এর সমাধান খুঁজে বের করা সময়ের দাবি। আমাদের আশাবাদ, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।