- রশীদ হারুন
সরকারের সু-দৃষ্টির কারণে বদলে যাচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল।নির্মিত হচ্ছে খুলনা-মোংলা পোর্ট রেললাইন। গতি ফিরে আসবে বন্দরের। আরো বেশি সচল হবে এ অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা। খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার রেলপথ। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর এর কার্যক্রম শুরু হয়। শেষ হবে ২০২১ সালের জুন মাসে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মেয়াদ ছিল। এই রেলপথ চালু হলে খুলনা বাসীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের।
খুলনা-মোংলা পোর্ট রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ৫ বছর। যা চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিলো। নিদর্িৃষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হবে না। মেয়াদ বৃদ্ধ করা হয়েছে আগামী ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। তবে মেয়াদ আর নাও বাড়তে পারে। ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়ানে খুলনা -মোংলা পোর্ট রেললাইন পথ নির্মিত হচ্ছে। এ জন্য ৩ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা বরাদ্ধ করা হয়েছে। মেয়াদ বৃদ্ধি পেলে টাকার পরিমানও বৃদ্ধি পেতে পারে। রূপসায় রেলসেতুসহ ৩২টি রেলসেতু এবং ১১২টি কালভার্ট নির্মিত হচ্ছে। সেতুগুলোরও ৬৫ভাগ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। রূপসা রেলসেতু এখন দৃশ্যমান। স্থাপন করা হয়েছে গার্ডার।

ভারত থেকে ১০হাজার ৮৫১ মেট্টিকটন ইউআইসি রেলপাটি আনা হয়েছে। আনা হয়েছে ভারত থেকে পাথরের ঢালাই রেলস্লিপার। মান যাছাইয়ের জন্য সেগুলো ল্যাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। ফুলতলা হতে মোংলা পর্যন্ত ৮টি স্টেশন নির্মিত হবে। সেগুলো কাজ দ্রুত গতীতে এগিয়ে চলছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে মোংলা বন্দরের সাথে উত্তরের পঞ্চগড় ও বাংলাবন্ধা হয়ে ভারতের সাথে যোগাযোগ উন্নতী হবে। দিন রাত চলছে কর্মযজ্ঞ। নেপাল, ভূটান ও ভারতের সাথে যোগাযোগ বাড়বে। ব্রড গেজে এই লাইন নির্মিত হচ্ছে। ইতো মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। খুলনা ও বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ভূমির মালিকরা তাদের টাকা পেয়েছেন। এর মধ্যে কয়েক জন ভূমি মালিক জমির মালিকানা নিয়ে মামলা করেছেন। এ কারণে অনেকে তাদের টাকা পায়নি। তারও তাদের পাওনা পেয়ে যাবেন। শ্রমিকরা পুরোদমে কাজ করছেন।
খুলনা -মোংলা রেললাইন নির্মানের সকল উপকরণ বুয়েট , কুয়েট ও প্রকল্প কার্যালয় সংলগ্ন ল্যাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি বিভাগের ১৮নং কাচারীরর কানুনগো মো. মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, খুলনা-মোংলা পোর্ট রেললাইনের সম্পত্তি যেহেতু ভূ-সম্পত্তি বিভাগকে হস্তান্তর করেনি সেহেতু এ সম্পত্তি কাচারীর অনকূলে এখনো আসেনি।
প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী আহম্মেদ হোসেন মামুন বলেন, এই প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতীতে এগিয়ে চলছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ নাও হতে পারে। তবে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মেয়াদ ছিল। আর মেয়াদ নাও বাড়তে পারে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এই অঞ্চল উন্নয়ন হবে। উন্নয়ন হবে মোংলা বন্দর। ঘুরবে অর্থনীতির চাকা। বহুল প্রত্যাশিত খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে রেলপথের খুলনা অংশে ২০ কিলোমিটার রাস্তায় মাটি ভরাটের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। বাগেরহাটের আরও ৪০ কিলোমিটার রাস্তায় মাটি ভরাটের কাজ চলমান রয়েছে। এসব কাজ শেষ হলে বসানো হবে রেলপাটি। এ জন্য ভারত থেকে প্রায় ১০ হাজার ৮৫১ মেট্রিক টন ওজনের ইউআইসি রেলপাটি আনা হয়েছে। পাশাপাশি ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে রূপসা সেতু নির্মাণে ৮৭৭টি পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া ভায়াডাক্টের ১৩৬টি পাইলক্যাপের মধ্যে ৭৮টি পাইলক্যাপ, ৩০টি পিয়ার ও ২০টি পিয়ার ক্যাপ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মাসেই ৪৬ ও ৪৭ পিয়ারের মধ্যকার ১২তম গার্ডারটি স্থাপন করা হয়েছে। রূপসা নদীতে এখন রেলসেতু দৃশ্যমান হচ্ছে। এখানে ১৪৩টি গার্ডারের মধ্যে ৭৩টি গার্ডার (৩২.৪৫ মিটার) রেলসেতু এলাকায় আনা হয়েছে। খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৮টি স্টেশন বিল্ডিং নির্মাণকাজও শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে দ্রুত এগিয়ে চলেছে খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ। প্রকল্প কর্মকর্তাদের দাবি, নির্মাণকাজ শেষ হলে ২০২২ সালের মধ্যে মোংলা বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে উত্তর অঞ্চলের পঞ্চগড় ও বাংলাবান্ধা হয়ে ভারতের শিলিগুড়ির রেল যোগাযোগ। অর্থনীতিবিদদের মতে, এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে দীর্ঘদিনের স্বপ্ন মোংলা বন্দর পুরোপুরি সচল হবে। এতে শিল্পনগরী খুলনা ফিরে পাবে হারানো ঐতিহ্য। সরেজমিন দেখা গেছে, রূপসা রেলসেতুর পশ্চিমপাড় বটিয়াঘাটা উপজেলার পুটিমারী ও পূর্বপাড় খাড়াবাদ এলাকায় দিন-রাত চলছে কর্মযজ্ঞ। রূপসার বুকে একের পর এক পিলার মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুর রহিম বলেন, রেলপথ প্রকল্পের কাজ এরই মধ্যে ৫০ ভাগ শেষ হয়েছে। বিশেষ করে খুলনা অংশের কাজ এগিয়েছে অনেকটাই। ফুলতলা রেলস্টেশনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে আড়ংঘাটা ও মোহাম্মদনগর স্টেশন বিল্ডিংয়ের পাইলিং শেষে অবকাঠামো নির্মাণকাজ চলছে। তবে বাগেরহাটের ৪টি স্টেশনের অ্যাপ্রোচ রোডের জন্য গত জানুয়ারিতে ১২ দশমিক ১৯ একর জমি অধিগ্রহণের অনুমোদন পাওয়া গেলেও ৭ ধারা নোটিস জারি করা হয়নি। এ ছাড়া মালিকানা দ্বন্দ্বে জমি বুঝে না পাওয়ায় রেললাইন নির্মাণ কাজ কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। এদিকে গত ৪ জুলাই খুলনা ও মোংলায় রেললাইন নির্মাণকাজ পরিদর্শন শেষে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, সমুদ্রবন্দর মোংলার সক্ষমতা বাড়াতে সরকার খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করছে। ২০২২ সালের মধ্যেই খুলনা-মোংলা রেললাইন চালু হবে। এই রেলপথে যাত্রী পরিবহনসহ মোংলা বন্দরের মালামাল পরিবহন করা হবে। তিনি বলেন, উত্তর অঞ্চলের পঞ্চগড় থেকে বাংলাবান্ধা হয়ে ভারতের শিলিগুড়ি পর্যন্ত সরাসরি রেল যোগাযোগ তৈরি হলে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বাড়বে। একই সঙ্গে মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী বাড়বে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে সার্কভুক্ত দেশগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রায় ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ চলছে। এতে খুলনার ফুলতলা থেকে বাগেরহাটের মোংলা বন্দর পর্যন্ত প্রায় ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রড গেজ রেললাইন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় রূপসা নদীতে রেলসেতুসহ ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৩১টি ব্রিজ ও ১১২টি কালভার্ট নির্মিত হবে। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির জানান, খুলনায় ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অগ্রগতির যে আশাবাদ তৈরি হয়েছে, তা মূলত খুলনা-মোংলা রেলপথ ও পদ্মা সেতু কেন্দ্রিক। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে ভারতের সঙ্গে আন্তঃযোগাযোগ ও নেপাল-ভুটানের ট্রানজিটের কেন্দ্রবিন্দু হবে মোংলা। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ঢাকার সঙ্গে হারানো ‘লিংকেজ’টা পুনরুদ্ধার হবে। এদিকে কাজের গতি আরও বাড়িয়ে খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন রেলপথ সচিব মোফাজ্জেল হোসেন। গতকাল সকালে খুলনা রেলওয়ে রেস্টহাউস সম্মেলন কক্ষে খুলনা-মোংলা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি-সংক্রান্ত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রেলপথ সচিব এ তাগিদ দেন।