শূন্য পাঁচ আসনে আ.লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী যারা

2
Spread the love
  • বিশেষ প্রতিনিধি


এক মাসেরও কম সময়ে শূন্য হয়ে পড়েছে জাতীয় সংসদের পাঁচটি আসন। এর মধ্যে ঢাকা-১০ আসন শূন্য হয়েছে ওই আসনের সদস্য (এমপি) ঢাকার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হওয়ায়। বাকি গাইবান্ধা-৩, বাগেরহাট-৪, বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসন শূন্য হয়েছে ওই আসনগুলোর এমপিদের মৃত্যুতে। শূন্য হয়ে পড়ায় এখন এসব আসনে উপ-নির্বাচন হবে। আর সবার আগ্রহ এখন উপ-নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী কারা হচ্ছেন, তা নিয়ে। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সব কটি আসনেই ক্ষমতাসীন দলটি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশায় রয়েছেন একাধিক নেতা। নৌকার টিকিট নিয়ে তারা বসতে চান জাতীয় সংসদে। যদিও শেষ পর্যন্ত দলের হাইকমান্ড যোগ্য ও জনবান্ধব প্রত্যাশীকেই মনোনয়ন দেবে বলে জানা গেছে।


ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা-১০ আসনের এমপি পদ ছাড়েন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ফলে ওই সংসদীয় আসনটি শূন্য হয়ে যায়। এই আসনে উপ-নির্বাচনে যে ক’জন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন, তাদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। শোনা যাচ্ছে একাদশ নির্বাচনে ঢাকা-১৩ আসনের মনোনয়নবঞ্চিত এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, তাপসের বড় ভাই ও যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, তাপসের সহধর্মিণী আফরিন তাপস, বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির নামও।
২৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন গাইবান্ধা-৩ আসনের এমপি ডা. ইউনুস আলী সরকার। শূন্য হয়ে পড়া এই আসনে উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি। তিনি গনমাধ্যমকে বলেন, আমার পরিবার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পরিবার। গাইবান্ধার মেয়ে হিসেবে অবশ্যই আমি মনোনয়ন চাইব। তবে প্রধানমন্ত্রী যাকেই মনোনয়ন দেবেন, আমি তার পক্ষেই কাজ করব, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে আরও সংগঠিত করতে।
এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হক, ইউনুস আলী সরকারের বড় ছেলে ড. ফয়সাল ইউনুস, পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য তোফাজ্জল হোসেন সরকারও রয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সারিতে। এদের মধ্যে মাহমুদুল হক নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু পরে আওয়ামী লীগ এ আসন মহাজোটকে ছেড়ে দিতে রাজি হলে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন মাহমুদুল। তাছাড়া ইউনুস আলী সরকারের বড় ছেলে ড. ফয়সাল ইউনুস রাজনীতিতে না থাকলেও বাবার আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচন করতে বিভিন্ন সময় আগ্রহ দেখিয়েছেন।
গত ১০ জানুয়ারি রাজধানীর বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বাগেরহাট-৪ আসনের এমপি ডা. মোজাম্মেল হোসেন। তার মৃত্যুতে শূন্য হয়ে পড়া আসনটির উপ-নির্বাচনে আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিরুল আলম মিলন, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি অধ্যাপক আব্দুর রহিম খান ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এ এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ।
মনোনয়ন প্রত্যাশী বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, আমার জন্মস্থান বাগেরহাটে। আমি দীর্ঘদিন এলাকায় কাজ করেছি। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, আমি ওই আসনে প্রার্থী হতে চাই।
রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ জানুয়ারি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন বগুড়া-১ আসনের এমপি আব্দুল মান্নান। তার মৃত্যুতে ওই আসনটিও শূন্য হয়ে পড়ে। ফলে উপ-নির্বাচন হবে এই আসনেও। বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক জাকির হোসেন নবাব, সারিয়াকান্দি পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর শাহী সুমন, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মুঞ্জিল আলী সরকার ও ডা. মকবুলার রহমান এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশায় তাকিয়ে আছেন হাইকমান্ডের দিকে।
সবশেষ গত ২১ জানুয়ারি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও যশোর-৬ আসনের এমপি ইসমাত আরা সাদেক। শূন্য হয়ে পড়া এ আসনে উপ-নির্বাচনেও দাঁড়াতে চান আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা।
এদের মধ্যে একজন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। তবে শেষে ইসমাত আরা সাদেককে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। এছাড়া কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এইচ এম আমির হোসেন, চলচ্চিত্র নির্মাতা ওয়াহেদ সাদেক, পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম মোড়ল ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম রুহুল আমিনও এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশায় প্রহর গুনছেন।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ এখন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে কাজ করছে। তবে বরাবরের মতো স্বচ্ছ ভাবমূর্তির যোগ্য ও কর্মীবান্ধব মনোনয়নপ্রত্যাশীরাই এক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, শূন্য হওয়া আসনগুলোতে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে লড়তে সৎ, যোগ্য, ত্যাগী, দলের আদর্শের প্রতি নিবেদিত ও জনপ্রিয় নেতাদের মাঝ থেকেই কাউকে মনোনয়ন দেয়া হবে।