প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে অবাধে নিধন হচ্ছে মা কাঁকড়া

40
Spread the love
  • জাহিদুর রহমান সোহাগ, দাকোপ


প্রজনন মৌসুমে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে অবাধে ডিমওয়ালা মা কাঁকড়া নিধন হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বন বিভাগের কতিপয় দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অসাধু জেলেরা মাছের পাশ নিয়ে বহালতবিয়তে একাজ চালিয়ে আসছে। ফলে প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরা পাশ পারমিট বন্ধ রাখার নির্দেশনা শুধু কাগজ কলমে সীমাবদ্ধ থাকছে।


এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারী মাস দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদ মা কাঁকড়ার প্রধান প্রজনন মৌসুম। এই মৌসুমে প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারী ভাবে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরার পাশ পারমিট বন্ধ রাখার নির্দেশনা রয়েছে। সারা বছরের মধ্যে এই দু‘মাসে মেদী-মায়া কাঁকড়া কোটি কোটি বাচ্চা ছাড়ে। আর সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার হাজারো জেলে এই কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এছাড়া এই কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি করে ব্যবসায়ীরাও বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করে। কিন্তু বনবিভাগের কতিপয় দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বনবিভাগের বিভিন্ন স্টেশনধীন নদী ও খালে অবাধে ডিমওয়ালা মা কাঁকড়া নিধন চলছে। বর্তমানে কাঁকড়ার দাম সর্ব নিন্মে সাড়ে ৩ থেকে ৪‘শ টাকা আর সর্বচ্চ ১৩ থেকে ১৪‘শ টাকা কেজি প্রতি বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিক লাভের আশায় স্বার্থনেষী শত শত জেলে মাছ ধরার পাশ পারমিট নিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মন মা কাঁকড়া আহরন করে প্রজনন বৃদ্ধিতে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করছে। আবার প্রকাশ্যে আই ওয়াশ দিয়ে এসব কাঁকড়া হ্যাচারীর বলে বিভিন্ন বাজারের ডিপোতে বিক্রি করছে জেলেরা। মাঝে মধ্যে আবার লোক দেখানো এসব কাঁকড়ার দুই একটি চালান ধরা পড়লেও কিছুতেই বন্দ হচ্ছে না মা কাঁকড়া নিধন। এভাবে প্রজনন কালিন কাঁকড়া ধরতে থাকলে চিংড়ির চেয়েও অর্থনৈতিক কারনে উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক এসম্পদ অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকার সচেতন মহল। ফলে প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরা পাশ পারমিট বন্ধ রাখার নির্দেশনা শুধু কাগজ কলমে সীমাবদ্ধ থাকছে বলে মনে করেন ওই মহলটি।


বিভিন্ন এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলের সাথে আলাপকালে তারা জানান বনবিভাগের কতিপয় দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা দুইজন জেলের দোনের নৌকা প্রতি গোনে দুই থেকে আড়াই হাজার আর ৩জন জেলের অবৈধ আটনের নৌকায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে মাছের পাশ দিয়ে এ অবৈধ কাজে সহযোগীতা করছে।
কোষ্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেঃ ইমতিয়াজ আলম খুলনাঞ্চলকে বলেন এপর্যন্ত তাদের অভিযানে অনেক কাঁকড়া আটক করে নদীতে অবমুক্ত করেছেন। প্রজনন মৌসুমে তাদের অভিযান শেষ দিন পর্যন্ত অব্যহত থাকবে বলে তিনি জানান। এবিষয়ে সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) মোঃ এনামূল হক‘র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমাদের টহল অব্যহত আছে। ম্যাসেজ পেলেও আছে না পেলেও আছে। আমি নিজেও টহলে যাই। তাছাড়া বিভিন্ন ক্যাম্পের লোকজন এসব জেলেদের আটক করছে, মামলা দিচ্ছে, ক্ষতি পূরণ আদায় করছে এবং কাঁকড়া টুকটাক ধরা পড়লে নদীতে ছেড়ে দিচ্ছে, এসব কার্যক্রম সব সময় চলতেই আছে। আমি নিজেও কয়েকদিন আগে নিষিদ্ধ খালে যাওয়ার অপরাধে দুইটি নৌকা জব্দ করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছি। এছাড়া আমাদের স্মাট টিমও কাঁকড়া ধরা জেলেদের আটক করছে। সম্প্রতি দুই একদিন আগে স্মাট টিম কাঁকড়া ধরার অপরাধে জেলেদের আটক করে মামলা দিয়েছে বলে তিনি জানান।