সপ্তাহে বাড়তি মজুরি গুণতে হবে সাড়ে ৩ কোটি টাকা

6
Spread the love


স্টাফ রিপোর্টার


লাগাতার আন্দোলনের পর মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের দাবি পূরণ হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের। মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের স্লিপও হাতে পেয়েছেন শ্রমিকরা।

এমনকি ৯ জানুয়ারি থেকে মজুরি কমিশন অনুযায়ী মজুরিও যোগ হতে শুরু করেছে তাদের পাওনার খাতায়। নতুন মজুরি স্কেল অনুযায়ী ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ মজুরি বেড়েছে শ্রমিকদের।

এদিকে, নতুন মজুরি স্কেল অনুযায়ী খুলনার নয় পাটকলের শ্রমিকদের সাপ্তাহিক মজুরি বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। আগে সাপ্তাহিক মজুরি প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা প্রদান করতে হলেও এখন প্রায় সাত কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। এছাড়া শ্রমিকদের আট সপ্তাহ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন মাসের বেতন বাবদ বকেয়া রয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা।

অপরদিকে, বিপুল অঙ্কের এ অর্থ পরিশোধের জন্য অর্থ যোগানের পথ দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা। মজুদকৃত পণ্য বিক্রি না হলে সরকারের ভর্তুকি ছাড়া এ অর্থ পরিশোধের বিকল্প কোন পথ নেই। এ অবস্থায় মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন হলেও শ্রমিকরা এখনও তার সুফল কতটুকু ভোগ করতে পারবেন- তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন-বিজেএমসি’র খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের সূত্র জানান, মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত, অর্থাৎ গত ২৮ নভেম্বর খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত আলিম জুটমিলে ১৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা সাপ্তাহিক মজুরি পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু নতুন মজুরি কমিশন অনুযায়ী গত ১৬ জানুয়ারি এ মিলে সেই মজুরি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

একইভাবে কার্পেটিং জুটমিলে ১০ লাখ ৬৩ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ২০ লাখ টাকা, ক্রিসেন্ট জুটমিলে ৮১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা থেকে বেড়ে এক কোটি ৭২ লাখ ৫১ হাজার টাকা, দৌলতপুর জুটমিলে ৫ লাখ ৬ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ইস্টার্ণ জুটমিলে ২০ লাখ ৫৩ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ৫২ লাখ ৩০ হাজার টাকা, জেজেআই জুটমিলে ৪২ লাখ ১৩ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ৭৪ লাখ টাকা, খালিশপুর জুটমিলে ২৯ লাখ ৫১ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ৭০ লাখ টাকা, প্লাটিনাম জুটমিলে ৭৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকা থেকে বেড়ে এক কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং স্টার জুটমিলে ৫৪ লাখ ৪৯ হাজার টাকা থেকে বেড়ে এক কোটি ৬ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে।

অপরদিকে, ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের সময় (কার্যকর) দেখানো হয়েছে। সে মোতাবেক অতিরিক্ত প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। যদিও এ হিসাব এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি।

এই সূত্র জানান, উল্লিখিত নয় জুটমিলে শ্রমিকদের ৮ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। যার পরিমাণ ৩০ কোটি ৬০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এছাড়া উল্লিখিত মিলগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন মাসের বেতন বাবদ বকেয়া রয়েছে ৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। সবমিলে মোট বকেয়ার পরিমান ৩৯ কোটি ২৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। যে অর্থ দ্রুতই পরিশোধ করা প্রয়োজন হবে।

এ বিষয়ে বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. বনিজ উদ্দিন মিঞা জানান, করপোরেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয় পাটকলের শ্রমিকদের ১৬ জানুয়ারি মজুরির প্রথম স্লিপ দেওয়া হয়েছে। নতুন মজুরি স্কেল অনুযায়ী শ্রমিকদের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ মজুরি বেড়েছে। কিন্তু আপাতত: এ পরিমাণ অর্থ পরিশোধের কোন সংস্থান নেই।

তিনি জানান, পাটকলে মজুদকৃত পণ্য বিক্রি করতে পারলে মোটামুটি মজুরি পরিশোধ করা সম্ভব হবে। অন্যথায় সরকারকে ভর্তুকি বা সরকারি অর্থায়নের কোন বিকল্প নেই।

বিজেএমসি’ সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে পে-কমিশনের সঙ্গে মজুরি কমিশন ঘোষণা করা হয় । কিন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের ঘোষিত মজুরি কমিশন বাস্তবায়নে শ্রমিকদের আন্দোলনে নামতে হয়। দীর্ঘ সাড়ে ৪ বছর আন্দোলনের পর শ্রমিকদের আমরণ অনশনের মধ্যদিয়ে সম্প্রতি সরকার রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল শ্রমিকদের ১১ দফার মধ্যে অন্যতম মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের দাবি মেনে নেয়।

দাবি পূরণের প্রতিক্রিয়ায় সাধারণ শ্রমিক আব্দুস সালাম মিয়া জানান, এবার ছেলে-মেয়ে নিয়ে দু’বেলা দু-মুঠো ভাত খেতে পারবো। সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারবো। অন্য শ্রমিকদের মত তার চোখে-মুখেও দেখা যায় হাসির ঝিলিক।