ভোট পেছানোর দাবি জোরালো হচ্ছে

7
Spread the love


খুলনাঞ্চল রিপোর্ট
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের তারিখ পেছানোর দাবি আরো জোরালো হয়ে উঠেছে। সরস্বতী পূজার দিনে ভোট না নিতে কমিশনে অভিযোগ, আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথে বিক্ষোভ-অনশন চলছে। এবার আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামও ভোট পেছানোর দাবি জানিয়েছেন। আর পূজার দিনে ভোটকে ‘অন্যায়’ আখ্যা দিয়ে তা পেছানের পক্ষে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছে ড. কামালের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) এক নির্বাচনী সমাবেশ থেকে ভোটের তারিখ পেছানোর দাবি জানান, ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। মিরপুর ১২ নম্বরের আলুব্দি ঈদগাহ ময়দানে আয়োজিত ওই সমাবেশে তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। আমি চাই না, সরস্বতী পূজার দিন নির্বাচন হোক। পূজার কথা স্মরণ রেখে নির্বাচন পেছানো হোক, এই দাবি করছি। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, ধর্ম পালনে কারো যেন কোনো বিঘ্ন না হয়। আমি চাই, নির্বাচন কমিশন এ বিষয়টি বিবেচনা করবে।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনও গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে এ প্রসঙ্গে কথা বলছেন। তিনি বলেন, আমরা মুসলমানরা নিশ্চয়ই চাইতাম না যে, ঈদের দিনে ভোট হোক। তাই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অনুভূতিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি নির্বাচন কমিশনের প্রতি ভোট পেছানো দাবি জানান। একই ধরণের কথা বলেন উত্তর সিটিতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালও।

এদিকে বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ভোট পেছানোর পক্ষে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির এক জরুরি সভার পর ড. কামাল হোসেন বলেন, সরস্বতী পূজার দিনে ভোট করা একটা অন্যায় কাজ হয়েছে। এমনটা অতীতে কোনোদিন হয়নি। এটা সরকারের একদম গাফিলতি ও ব্যর্থতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এ সংক্রান্ত কর্মসূচির প্রতি নীতিগতভাবে ঐক্যফ্রন্ট একমত বলে জানান তিনি।

আমরণ অনশণে শিক্ষার্থীরা: সরস্বতী পূজার কারণে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে রাজু ভাস্কর্যে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি শুরু করেন।

অনশনে অংশ নেয়া জগন্নাথ হল সংসদের ভিপি উৎপল বিশ্বাস বলেন, একই সঙ্গে পূজা ও নির্বাচন হতে পারে না। তাই নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে আমরা সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে না ফেলে এই অহিংস আন্দোলন শুরু করেছি।

জগন্নাথ হল সংসদের জিএস কাজল দাস বলেন, আমাদের এই আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নয়, নির্বাচন কমিশনের অসাংবিধানিক ও সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা অনশন চালিয়ে যাব।

এর আগে একই দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মধুর ক্যান্টিন থেকে ছাত্রদলের শতাধিক নেতাকর্মী একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাস ঘুরে রাজু ভাস্কর্যে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।

রাজধানীর বাইরেও সিটি নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবি উঠেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ঢাকা সিটি নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে কুবির মেইনগেইট সংলগ্ন সড়কে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা তারিখ পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি হিল্লোল কান্তি দাস বলেন, ধর্ম নিরপেক্ষতার দাবি নিয়ে দাঁড়াতে হবে এটা ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে। এই তারিখে নির্বাচন দেয়ায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ভবিষৎ এমন সিদ্ধান্ত নিলে কঠোর আন্দোলন করা হবে। কুবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বলেন,’ নির্বাচন কমিশন ভুল করেছে। তিনি সরকারের হস্তক্ষেপও কামনা করেন।