শ্রাবণী হালদার
দিগন্তে যতদূর চোখ যায় যেন হলুদ এক নদী একে-বেঁকে বয়ে চলেছে। অথবা সবুজ মাঠের বুকে দিগন্তজুড়ে বিছানো কোনো হলুদরঙা কার্পেট। শীত আর সরিষাফুল যেন একে অন্যের পরিপূরক। পৌষের রোদমাখা কোনো একদিনে আপনিও চলে যেতে পারেন শহর ছেড়ে একটু দূরে। যেখানে মহাসড়কের পাশেই চোখে পড়বে হলুদ-সবুজের নয়নাভিরাম দৃশ্যপট। সরিষা ক্ষেতের কাছে গিয়ে দেখতে পাবেন ফুলে ফুলে মৌমাছি, প্রজাপতি ও ছোট ছোট পাখিদের ওড়াওড়ি। ফুলের গন্ধে, আবেশে চোখ বুজে মুহূর্তেই আপনি হারিয়ে যেতে পারবেন শৈশব-কৈশোরে মাঠে মাঠে দুরন্তপনার দিনগুলোতে। তবে প্রাকৃতির সৌন্দর্য্য উপভোগ করার পাশাপাশি একটুখানি খেলায় তো করতেই হবে যেন ফসলের ক্ষতি না হয়।
সরিষা ক্ষেতের কাছে গিয়ে দেখতে পাবেন ফুলে ফুলে মৌমাছি, প্রজাপতি ও ছোট ছোট পাখিদের ওড়াওড়ি। ফুলের গন্ধে, আবেশে চোখ বুজে মুহূর্তেই আপনি হারিয়ে যেতে পারবেন শৈশব-কৈশোরে মাঠে মাঠে দুরন্তপনার দিনগুলোতে। তবে প্রাকৃতির সৌন্দর্য্য উপভোগ করার পাশাপাশি একটুখানি খেলায় তো করতেই হবে যেন ফসলের ক্ষতি না হয়।
শহুরে দূষণ আর কোলাহল ছেড়ে যেখানে গিয়ে আপনিও আওড়াতে পারেন পল্লীকবি জসীমউদ্দিনের কবিতা-
‘ঘুম হতে আজ জেগেই দেখি শিশির-ঝরা ঘাসে,
সারা রাতের স্বপন আমার মিঠেল রোদে হাসে।
আমার সাথে করতে খেলা প্রভাত হাওয়া ভাই,
সরষে ফুলের পাঁপড়ি নাড়ি ডাকছে মোরে তাই।”
সরিষা ফুলের বর্ণনা: হলুদ রঙের এই ফুলটিতে চারটি পাপড়ি থাকে। একটি সরিষাগাছের জীবনধারায় আনুমানিক ২০০টির মতো ফুল ফোটে এবং একটি গাছ এক হাজার শস্যবীজ তৈরি করতে সক্ষম হয়। সরিষাগাছ ক্রুশিফেরাস গোত্রের অন্তর্ভুক্ত তেল উৎপাদক একবর্ষজীবী প্রজাতির উদ্ভিদ।
বাংলাদেশের কৃষকেরা রবি মৌসুমে অর্থাৎ মধ্য কার্তিক থেকে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহ (মধ্য নভেম্বর) পর্যন্ত সরিষার বীজ বপন করে থাকেন। শীতকালে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে তাই গ্রামের মাঠে মাঠে হলুদের সমারোহ দেখতে পাওয়া যায়।
কমবেশি সব জেলাতে সরিষার চাষ হলেও ঢাকা, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর, গাইবান্ধা ও পঞ্চগড় জেলায় পরিমিত পরিমাণে আবাদ হয়ে থাকে।
সরিষা যে কাজে লাগে: সরিষা দিয়ে ভোজ্যতেল তৈরি করা হয়। দেশের ঐতিহ্যগত ঘানির খাঁটি সরিষার তেল সবাই পছন্দ করেন। সরিষাক্ষেতে কৃত্রিমভাবে মৌমাছির চাক বানিয়ে মধু আহরণ করা হয়। যা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক উপায়ে মৌমাছির চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে মধু উৎপাদন করা হয়।
সরিষার দানা দিয়ে গুঁড়া মসলা, আচার, চাটনি, কাসুন্দি প্রভৃতি প্রস্তুত হয়। হলদে জাতের সরিষার দানা, আমরা যাকে রাই-সরিষা বলি, যা স্বল্প-মিষ্ট স্বাদের হয়ে থাকে। এই জাতের সরিষার পেস্ট ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় রকমারী রন্ধনে। বাদামি রঙের সরিষা, যা কিছুটা সৌরভযুক্ত ও ঝাঁঝাল ধাঁচের হয়। বিভিন্ন পাখির প্রিয় খাদ্য হিসেবেও সরিষা বেশ পছন্দের। সরিষা শাক ও সরিষা ফুল রান্না করে খাওয়ারও প্রচলন আছে। ভো.কাগজ