খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর উত্থাপিত দাবি প্রসঙ্গে খুবি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

25
Spread the love

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী গত ১৩ নভেম্বর ২০১৯ খ্রি. তারিখ ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের কাছে বেশ কয়েক দফা দাবি উত্থাপন করে একটি স্মারকলিপি প্রদান করে।

শিক্ষার্থীদের দাবিসমূহের মধ্যে বেতন বৃদ্ধি প্রসঙ্গ ছাড়াও আবাসন সংকটের সমাধান, ছাত্র অধ্যাদেশ সংশোধনসহ নানাবিধ প্রসঙ্গ ছিলো, যার মধ্যে কিছু আশু সমাধানযোগ্য এবং কিছু অবকাঠামোগত নির্মাণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে সমাধান নির্ভর।

স্মারকলিপি প্রদানের পর থেকে ছাত্রবিষয়ক পরিচালক নিজে শিক্ষার্থীদের সাথে কয়েক দফা কথা বলেন। গত ২১ নভেম্বর তিনি তাদের সাথে প্রায় তিনঘণ্টা কথা বলেন এবং আশুসমাধানযোগ্য বিষয়গুলো চিহ্নিত করে তা জরুরীভিত্তিতে সমাধান করা এবং দীর্ঘমেয়াদী বিষয়গুলো নিয়েও কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানাবার আশ্বাস দেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধি এবং নতুন মেডিকেল সেন্টার ভবন নির্মিত না হওয়া পর্যন্ত কে ইউ-আরডিসি (খুলনা ইউনিভার্সিটি-রোটারি ডিস্ট্রিক্ট) হাসপাতালে মেডিকেল সেন্টার স্থানান্তর করে চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেন। ইতোমধ্যে উক্ত মেডিকেল সেন্টার সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছে এবং আগের তুলনায় সেখানে চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল সেন্টারের কাজ শুরু করার প্রক্রিয়া চলছে যা শেষ হলে এ সুবিধা আরও বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।

শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত দাবি প্রসঙ্গে বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি হলের (একটি ছাত্র ও একটি ছাত্রী) সম্প্রসারণ কাজ চলছে যা বর্তমান বছরের মার্চ-এপ্রিল এর মধ্যে শেষ হলে আরও কয়েকশত শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা বাড়বে এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নতুন উন্নয়ন প্রকল্পে আরও ২টি আবাসিক হল নির্মাণ অন্তর্ভূক্ত করছেন।

শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত দাবিগুলোর অন্যতম ছিলো বেতন বৃদ্ধি প্রসঙ্গ। ছাত্র বিষয়ক পরিচালক এ বিষয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্য সংগ্রহ করে পুনরায় ছাত্রদের সাথে কথা বলার প্রতিশ্রতি দেন। ইতোমধ্যে গত নভেম্বরে সকল ডিসিপ্লিনে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা এবং ডিসেম্বরের ২২ তারিখে অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ সমাবর্তন প্রস্তুতিতে সকল শিক্ষক,কর্মকর্তা,কর্মচারি ব্যস্ত থাকেন। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত বেতন বিষয়ক তথ্য ছাত্রদের অবগত করানোর জন্য ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের ফেসবুকে প্রদান করা হয় এবং এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জানানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তারা ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের সাথে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানায়।

আন্দোলনকারী ওই শিক্ষার্থীরা গতকাল ১ জানুয়ারি বেলা ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে গেটের বাইরে অবস্থান করে নানা ধরনের শ্লোগান দিতে থাকে। বেলা সোয়া দুইটার দিকে অবস্থানরত ওই শিক্ষার্থীদের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ সর্ম্পকে জানাতে হাজির হন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল স্কুলের (অনুষদ) ডিন, রেজিস্ট্রার ও ছাত্র বিষয়ক পরিচালক। কর্তৃপক্ষ গঠিত ৯ সদস্যের ডিন কমিটির সভাপতি কলা ও মানবিক স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. শেখ মোঃ রজিকুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তাদের জানাতে চান এবং আলোচনা করে তাদের উত্থাপিত দাবি সমাধান করার আশ্বাস দেন। কিন্তু অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা ডিনদের কোনো কথাই শুনতে চায়নি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত সচেতন ও দায়িত্বশীল। কিন্তু কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী গতকাল ডিনদের সাথে যে আচরণ করে তা সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত, অশোভন ও অত্যন্ত দুঃখজনক এবং সাথে সাথে তা উদ্বেগের।

এছাড়া কর্তৃপক্ষ আরও উদ্বিগ্ন এ কারণে যে, কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক তাদের সরাসরি ইন্ধন দিচ্ছেন এবং নানাভাবে তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। এমনকি তাদের মধ্যে কয়েকজন গতকাল দুপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সামনে সরাসরি হাজির হয়ে বক্তব্যও রাখেন যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নজিরবিহীন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বলেন, ইতোমধ্যে অন্য সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-ফি তালিকা সংগ্রহের কাজ চলছে। যদি অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি অস্বাভাবিক বেশি হয়ে থাকে তা কমানো হবে। তিনি আরও বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য গঠিত কমিটি যেসব সুপারিশ করবে তা দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করা হবে।

শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত দাবিসমূহ বিবেচনায় নিয়েই কর্তৃপক্ষ একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। তাই এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার মনোভাব পোষণ করা কাম্য। কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী আজ বেলা পৌণে ১২টায় অতর্কিতে শহিদ তাজউদ্দিন আহমদ প্রশাসন ভবনে তালা লাগিয়ে দিয়ে সুষ্ঠু প্রশাসনিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করে। এর ফলে মাননীয় উপাচার্য, সম্মানিত রেজিস্ট্রারসহ শতাধিক কর্মকর্তা কর্মচারি অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। কর্তৃপক্ষ মনে করেন অন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট সচেতন ও বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন। তারা তাদের দাবির যৌক্তিকতা বিষয়ে নিশ্চয়ই পর্যলোচনা করবে এবং তারা অন্যের পাতা ফাঁদে পা দেবে না বলে কর্তৃপক্ষ আশা করে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চলমান রাখা, সুনাম ও ভাবমূর্তি অক্ষুণœ রাখার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ডিনদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকে সহযোগিতা করে উত্থাপিত দাবির ব্যাপারে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সমাধানে আসা সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সবসময়ই যৌক্তিক দাবির বিষয়ে সহানুভূতিশীল। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত বিধিবিধান ও এতদিনের প্রথা ইচ্ছে করলেই রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়। এর জন্য সময় প্রয়োজন। একই সাথে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র ভাবমূর্তি ও এতদাঞ্চলের মানুষের লালিত স্বপ্ন যেনো কোনোভাবে ক্ষুণœ না হয় সে দিকেও শিক্ষার্থীদের দায়বদ্ধতা রয়েছে বলে কর্র্তৃপক্ষ মনে করেন। সার্বিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে তাদের অবস্থান থেকে সরে আসার এবং কর্তৃপক্ষ গঠিত কমিটিকে সহযোগিতা করে যৌক্তিক দাবি পূরণের পথ সুগম করার আহবান জানাচ্ছে।