বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ ও মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে খুলনা-যশোর অঞ্চলের ৯ রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকল এবং রাজশাহী পাটকল শ্রমিকরা চতুর্থ দিনের মত আমরণ অনশন কর্মসূচি চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে এর আগে নানা সময়ে তাদের দাবি পূরণের জন্য সময় চাওয়া হলে তারা কয়েকদফা আন্দোলন স্থগিত করেছিল। সর্বশেষ শ্রমিক কর্মচারীরা ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে দাবি পূরণের জন্য।
বর্তমানে আবারও খালিশপুরে ক্রিসেন্ট, প্লাাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর ও দিঘলিয়ার ষ্টার মিলের শ্রমিকরা বিআইডিসি রোড, আটরা শিল্প এলাকার আলীম, ইস্টার্ন এবং নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার কার্টেং, জেজেআই মিলের শ্রমিকরা স্ব স্ব মিল গেটে অবস্থান নিয়ে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অনশন কর্মসুচি পালন করছে। তীব্র শীতের মধ্যে রাত দিন খোলা আকাশের নীচে অবস্থান করে একের পর এক অনাহারী শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
বিগত সময়ের অনশন কর্মসূচি থেকে বাসায় ফিরে অসুস্থতাবোধ করে আব্দুস সাত্তার (৫৫) নামে খুলনার প্লাটিনাম জুটমিলের হেসিয়ান তাঁতের শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেছিল। বিষয়টি নিয়ে সেসময় সাময়িক উত্তেজনা তৈরি হলেও সরকার ও শ্রমিক কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপে কোনো নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
সেসময় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ‘মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করার মতো পর্যাপ্ত অর্থের সংকট রয়েছে। জাতীয় মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করতে এক হাজার একশ তিন কোটি টাকার প্রয়োজন। রাষ্ট্রায়াত্ত্ব পাটকলগুলোর পণ্য বিক্রি করে এ অর্থ যোগাড় করা সম্ভব নয়। এ কারণে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সব রকম চেষ্টা করছি আমরা।’ মন্ত্রীর ওই আশ্বাসের পরে কিছুদিন থেমে থাকলেও আবারও আন্দোলনে নেমেছে শ্রমিক কর্মচারীরা।
পরিবেশের প্রেক্ষাপটে পাটখাত সারাবিশ্বে একটি বহুল চাহিদা সম্পন্ন খাত। এইঅবস্থায় বাংলাদেশের একসময়ের চরম লাভবান পাট খাত কেন ক্রমাগত লোকসানের পথে? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে অনেকে কাজ করেছেন, হয়তো করছেন। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য কোনো কার্যকর সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না এই খাতের উন্নয়নে।
বর্তমানে পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) আওতাধীন ২৬টি পাটকলের মধ্যে ২৫টি চালু রয়েছে। ২২টি জুট ও ৩টি নন-জুট মিলের মধ্যে ২৪ প্রতিষ্ঠানই বর্তমানে লোকসানে রয়েছে। কেবলমাত্র মিলস ফার্নিশিংস লিমিটেড নামের একটি নন-জুট কারখানা লোকসানে নেই। দুর্নীতি, পুরোনো প্রযুক্তির ব্যবহার, অদক্ষতা, পণ্যে বৈচিত্র্য না থাকা, সর্বোপরি জবাবদিহিতার অভাবে পাটকলগুলো মরতে বসেছে। বছরের পর বছর ভর্তুকি দিয়ে চালিয়ে নেওয়া পাটকলগুলো বন্ধ করার সময় এসেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মত প্রকাশ করা শুরু করেছেন।
২০১৫ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছয়টি সেক্টরে মজুরি কমিশন ঘোষণা করেন। অন্য পাঁচটি সেক্টরে মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন হলেও পাটকল শ্রমিকদের জন্য তা বাস্তবায়ন হয়নি। সেই সূত্র ধরেই শ্রমিক-কর্মচারীদের এই আন্দোলন।
ঐতিহ্যমন্ডিত পাট খাতের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনাসহ শ্রমিক-কর্মচারীদের দাবির যৌক্তিকতা যাচাই করে এই অবস্থার পরিবর্তন একান্ত কাম্য। আমাদের আশাবাদ, সংশ্লিষ্টরা এই বিষয়ে উদ্যোগী হবেন।